বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস
আত্মহত্যা নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন
আত্মহত্যা একটি বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সংকট, যার সামাজিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব অত্যন্ত গভীর। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭ লক্ষাধিক মানুষ আত্মহত্যা করে এবং প্রতিটি আত্মহত্যা অসংখ্য মানুষকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যা ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজকে সমানভাবে নাড়া দেয়।
আত্মহত্যা নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য হলো আত্মহত্যা ও আত্মঘাতী আচরণ নিয়ে ব্যক্তি, সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও সরকারের মধ্যে খোলামেলা এবং আন্তরিক আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা। এই আলোচনাগুলো শুরু করে আমরা আত্মহত্যা নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার ও নীরবতা ভাঙতে পারি, সচেতনতা গড়ে তুলতে পারি এবং একে ঘিরে একটি সহানুভূতিশীল ও সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি।
প্রত্যেক জাতি, সমাজ ও ব্যক্তি আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্পর্কে ভিন্ন পর্যায়ে সচেতনতা ও বোঝাপড়ায় অবস্থান করছে। আপনি যেই অবস্থানে থাকুন না কেন, বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে অংশগ্রহণের অনেক উপায় রয়েছে। আমরা এমন বিভিন্ন কার্যক্রম ও সহায়ক উপকরণ প্রস্তুত করেছি, যা সবাইকে অর্থপূর্ণভাবে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। আপনি যদি আত্মহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ে সদ্য আগ্রহী হয়ে থাকেন বা দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে কাজ করে থাকেন—উভয় ক্ষেত্রেই আপনি এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে অংশ নিয়ে পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারেন।
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে আত্মহত্যা নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর কিছু উপায় এবং কীভাবে এসব আলোচনা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিয়ে আসা যায় তার কিছু উদাহরণ:
আত্মহত্যা নিয়ে খোলাখুলি ও সহানুভূতিশীলভাবে কথা বলুন
পরিবারের সদস্য, বন্ধু বা সহকর্মীদের মানসিক অবস্থার খোঁজ রাখুন
কারও আচরণে পরিবর্তন দেখলে পাশে দাঁড়ান ও সাহায্য করার চেষ্টা করুন
সামাজিক মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব নিয়ে সচেতনতা ছড়ান
নিজের গল্প বা অনুভূতি ভাগ করে অন্যকে সাহস দিন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস বা কমিউনিটিতে সচেতনতামূলক আলোচনার আয়োজন করুন
যদি আমরা এই কাজগুলো একসঙ্গে সবাই মিলে চেষ্টা করি তাহলে আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে পারবো যেখানে মানুষ বুঝবে—মানসিক কষ্ট লুকানোর কিছু না, আর সাহায্য চাওয়াটা দুর্বলতা নয়।
প্রতিটি ছোট্ট কথাও গুরুত্ব রাখে। আপনার একটুখানি মনোযোগ, একটি সহানুভূতিশীল কথা—কাউকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। আমরা সবাই মিলে এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি, যেখানে আত্মহত্যা প্রতিরোধকে গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং প্রত্যেকে প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা পায়।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে আপনি যা করতে পারেন
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে এবং তার পরেও আত্মহত্যা নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে আপনি কিছু সহজ কাজ করতে পারেন, যা আপনার দৈনন্দিন জীবনের অংশ হতে পারে।
প্রিয়জনদের খোঁজ নিন
আপনার পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী, প্রতিবেশী বা এমনকি কোনো অচেনা মানুষ—যার বিষণ্ন মনে হচ্ছে, তার খোঁজ নেওয়াটা জীবন বদলে দিতে পারে। আপনি যদি মনে করেন কেউ মানসিকভাবে কষ্টে আছে, তবে নির্ভয়ে জিজ্ঞেস করুন সে আত্মহত্যার কথা ভাবছে কি না। সহানুভূতি দেখানো, তাদের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া কষ্ট কমাতে সহায়তা করে। তাদের কাউন্সেলিং নিতে উৎসাহ দিন।
তথ্য জানুন ও প্রশিক্ষণ নিন
আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও সচেতনতা নিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এতে আপনি জানতে পারবেন কাকে কীভাবে সহায়তা করতে হবে। অনেক সময় স্থানীয় ওয়ার্কশপ, অনলাইন কোর্স বা কর্মস্থলেই এ ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
নিজের গল্প শেয়ার করুন
যারা আত্মহত্যার চেষ্টায় বেঁচে গেছেন বা আত্মহত্যার কারণে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন—তাদের অভিজ্ঞতা অনেক মূল্যবান। নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশে গল্প শেয়ার করলে তা অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে পারে। আপনার অভিজ্ঞতা অন্যদের সাহস দিতে পারে, সহায়তা নিতে উৎসাহিত করতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কাজ করুন
আপনার কমিউনিটিতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা ছড়ান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, স্থানীয় ইভেন্ট বা সাধারণ আলাপচারিতার মাধ্যমেও আপনি এই বার্তা ছড়াতে পারেন যে—মানসিক স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সহায়তা পাওয়া সম্ভব।
সবচেয়ে বড় কথা, আপনার ছোট্ট একটি উদ্যোগ, একটি কথা বা সহানুভূতির ইঙ্গিত—কাউকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। আপনার অংশগ্রহণই পারে পরিবর্তনের পথ দেখাতে।
আইএএসপি’র সভাপতির বার্তা
দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা বিষয়টি নীরবতা, কুসংস্কার ও ভুল বোঝাবুঝির পর্দায় আচ্ছাদিত ছিল। এই নীরবতা শুধু খোলামেলা আলোচনাই বাধাগ্রস্থ করেনি, বরং অনেক মানুষকে তাদের জরুরি সহায়তা চাইতে নিরুৎসাহিত করেছে।
কিন্তু আলোচনা শুরু করলেই আমরা আত্মহত্যা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারি—নিরাশা থেকে আশার পথে এক নতুন গল্প গড়ে তুলতে পারি।
এই বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থার (IASP) সভাপতি অধ্যাপক ররি ও’কনর তাঁর এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন।
চলুন, আমরা সবাই মিলে নীরবতা ভেঙে আশার আলো ছড়িয়ে দিই।