সভাপতির কথা

  • Post comments:0 Comments
  • Reading time:1 mins read
                         

প্রিয় বন্ধু ও সহযাত্রী,

আজ ১০ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস-২০২৪। ২০২৪-২০২৬-এর প্রতিপাদ্য হল ‘আত্মহত্যার উপর আখ্যান পরিবর্তন করা’ (changing the narrative on suicide) এবং এই বছরের আহ্বান হল ‘কথোপকথন শুরু করুন’। এই থিমের লক্ষ্য আত্মহত্যার আশেপাশের আখ্যান পরিবর্তনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, কুসংস্কার হ্রাস করা ও আত্মহত্যা প্রতিরোধে খোলামেলা কথোপকথনকে উৎসাহিত করা। যদিও এটি করা চ্যালেঞ্জিং, তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য। নীতিনির্ধারণে মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মহত্যা প্রতিরোধকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া এবং সরকারকে আত্মহত্যা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করার জন্য স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কৌশল ও জ্ঞান ভাগ করে নিয়ে আমাদের প্রতিটি কণ্ঠস্বর ব্যবহার করার বিষয়টিও থিমের অন্তর্ভুক্ত।
সম্ভাবনাময় আর আশা আকাঙ্ক্ষায় পরিপূর্ণ প্রতিটি জীবন মূল্যবান, প্রতিটি সংগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ। আসন্ন আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ দিন। একত্রিত হয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করার ও নিজেদের মধ্যে একটি শক্তিশালী বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এটি একটি সুযোগ।
আমরা যারা আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করি, তারা জানি, এটি শুধু একটি দিবস নয়, বরং এটি প্রতিদিনের কাজ। আত্মহত্যা একটি গভীর সংকট যা সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রভাব ফেলে। এটি এমন একটি সংকট যা নীরবে ও ধীরে ধীরে মানুষকে গ্রাস করে। অনেক সময় আমাদের চোখের আড়ালেই সেটি ঘটে যায়। এই সংকট মোকাবিলা করার জন্য, আমাদের সকলের সচেতনতা ও সহানুভূতির সাথে এগিয়ে আসতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা সহজ নয়, তবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা চুপ থাকি, তখন সেই নীরবতা একজন ব্যক্তির জীবনের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠতে পারে। তাই, আসুন আমরা এই নীরবতা ভেঙে ফেলার প্রতিজ্ঞা করি।
আপনারা যারা সংগ্রাম করছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনার জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। আপনার ব্যথা হয়তো গভীর, তবে এই ব্যথা আপনার একার নয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই আপনার সাথে রয়েছেন। আমরা আপনাকে সাহায্য করতে চাই, আপনাকে শুনতে চাই আপনাকে বলতে চাই যে, আপনি গুরুত্বপূর্ণ। সহায়তা চাওয়া কোনো দুর্বলতা নয় বরং এটি সবচেয়ে বড় শক্তির প্রকাশ।
পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও সহকর্মীদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব আছে। আসুন আমরা নিজেদের চারপাশে সচেতন থাকি, আমরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করি যেখানে প্রত্যকেই তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে নিরাপদ বোধ করবে। সামান্য সহানুভূতি নিয়ে একটি ছোট্ট কথোপকথন বা বন্ধুর কাঁধে হাত রাখাও কারো অতি মূল্যবান জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে।
এই আসন্ন আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে, আসুন আমরা একত্রিত হয়ে শপথ করি যে আমরা কখনও হার মানব না। আমরা আত্মহত্যার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব, আমাদের সম্পদ, সময় ও মনোবল দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না আত্মহত্যার হার শূন্যে না নামে। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ, কিন্তু আমরা জানি যে সম্মিলিতভাবে আমরা এটি অর্জন করতে পারি।
এই যুদ্ধে আমরা একা নই। আমাদের সাথে আছেন বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা, যারা সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও বেঁচে থাকার সাহস দেখিয়েছেন আমাদের সাথে আছেন পরিবার ও বন্ধুরা, যারা তাদের প্রিয়জন হারিয়েছেন ও অন্যদের বাঁচানোর জন্য কাজ করছেন। আমাদের সাথে আছেন প্রতিটি মানুষ, যারা বিশ্বাস করেন প্রতিটি জীবনকে রক্ষা করা সম্ভব ও প্রয়োজনীয়।
আসুন, আমরা আমাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করি, আমাদের উদ্দেশ্যকে শক্তিশালী করি, এবং প্রতিটি মানুষের জীবনের জন্য দাঁড়াই। আমরা একসাথে জীবনের জন্য লড়াই করব। আমরা এ দিনে আজ বলতে পেরে আনন্দিত যে, বাংলাদেশে ব্রাইটার টুমোরো ফাউন্ডেশন (বিটিএফ) ছাড়াও আরো কয়েকটি সংগঠন যেমন কান পেতে রই হেলপ লাইন, আঁচল ফাউন্ডেশন, এন্টি সুইসাইডাল স্কোয়াডসহ বেশ ক’টি সংগঠন এখন আত্মহত্যা প্রতিরোধের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ব্রাইটার টুমোরো ফাউন্ডেশন ( বিটিএফ) আশা করছে, আমরা সবাই যেনো আশার আলো হয়ে উঠতে পারি তাদের জন্য, যারা এখনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। ধন্যবাদ।

জয়শ্রী জামান
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বিটিএফ

Leave a Reply