বিষন্নতা ও উদ্বেগের কারণে বছরে হারিয়ে যাচ্ছে ১২ বিলিয়ন কর্মদিবস

  • Post comments:0 Comments
  • Reading time:2 mins read

জয়শ্রী জামান

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি বছর ১০ অক্টোবর বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে নানা আয়োজনে পালন করা হয় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। দিবসটির উদ্দেশ্য, বিশ্বজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, সামাজিক কুসংস্কার দূর করা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সমর্থন প্রচেষ্টাকে একত্রিত করা।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক তথ্যে বলা হয়, ২০১৯ সালে কর্মক্ষম প্রাপ্তবয়স্কদের ১৫ শতাংশ একটি মানসিক ব্যাধি রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী, আনুমানিক ১২ বিলিয়ন কর্মদিবস বিষন্নতা ও উদ্বেগের কারণে হারিয়ে যায়। 

ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথের(ডব্লিউএফএম এইচ) উদ্যোগে দিবসটি ১৯৯২ সালে প্রথম পালন করা হয়। দিবসটি বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষের জীবনে মানসিক  স্বাস্থ্যের গুরুত্বের প্রতি  মনোযোগ আনে। এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা নিয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কী কী করা দরকার তা নির্নয়ে  মানসিক স্বাস্থ্য  পেশাদারদের তাদের কাজের উপর আলোচনা ও আলোকপাত করার সুযোগ  দেয়। 

১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্নয় করা হয়। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এখনই সময়’ (ইট ইজ দ্য টাইম টু প্রাইওরিটাইজ মেন্টাল হেলথ ইন ওয়ার্কপ্লেস)। কর্মক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার  গুরুত্ব অনুধাবন করেই এ বছরের বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের এই প্রতিপাদ্যের অবতাড়ন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বিশ্বে জনসংখ্যার প্রায় ৬০শতাংশ মানুষ কর্মরত। যাদের জীবন ও জীবিকার তাগিদে এক দীর্ঘ সময় ধরে কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত থাকতে হয়। কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ পাওয়া সকল শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার । 

কর্মক্ষেত্রে যথাযথ মনোনিবেশ করার পূর্বশর্ত সুস্থতা। শারীরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সমন্বয়ে নিশ্চিত হয় সুস্থতা আর সুস্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে কর্মদক্ষতা। কর্মদক্ষতা ব্যক্তি, পরিবার, প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সামগ্রীক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। 

শ্রমিকের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন সূস্থ আনন্দদায়ক কাজের পরিবেশ। বৈষম্য, অত্যধিক কাজের চাপ, অনিশ্চয়তা নিরাপত্তাহীনতাসহ দুর্বল কাজের পরিবেশ মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে। 

কর্মক্ষেত্রে মানসিক প্রতিকুলতা ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতির দিকে ধারিত করে। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ শুধুমাত্র একটি মৌলিক অধিকারই নয় বরং কর্মক্ষেত্রে উত্তেজনা ও দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনার পাশাপাশি কর্মীদের, কর্মক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতা উন্নত করার সম্ভাবনাও তৈরি করে। বিপরীতভাবে, কর্মক্ষেত্রে কার্যকর কাঠামো ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ না থাকা কর্ম ক্ষমতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

কর্মক্ষেত্রে, মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘মনোসামাজিক ঝুঁকি’ অভিহিত করেছে। কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি, দক্ষতা প্রয়োগে অসক্ষম করে তুলতে পারে।
অত্যধিক চাপ কাজের গতি কমিয়ে দেয়। নেতিবাচক আচরণে প্ররোচিত করতে পারে। গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার ব্যক্তিদের প্রায়ই চাকরি থেকে বাদ পড়ার এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য অনুভব করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আবার কাজের বাইরে থাকা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও তৈরি করে।

কোনো কোনো কর্মক্ষেত্রে হয়রানি, বুলিং, অপদস্থতা, অসহযোগিতার কারণে সৃষ্ট তীব্র মানসিক চাপ বিষন্নতা ও উদ্বিগ্নতার জন্ম দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নেতিবাচক পরিবেশ  হতাশা, অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগজনিত রোগ, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার সিজোফ্রেনিয়া এবং  ডলিউশনাল ডিজঅর্ডারসহ বিভিন্ন মানসিক রেগের জন্ম দেয়। আবার বেকারত্ব, চাকরি এবং আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা ও চাকরি হারানো মানসিক রোগের পাশাপাশি আত্মহত্যা ও আত্মহত্যার প্রচেষ্টার ঝুঁকি বয়ে আনে।

সরকার, নিয়োগকর্তা, কর্মী এবং নিয়োগকর্তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গ কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন ও নিশ্চয়তা বিধানে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা ও কর্মক্ষেত্রে সবার সহমর্মিতা ও সহাযোগিতা। কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য মোকাবিলায় দরকার মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে অর্থপূর্ণ সম্পৃক্ততা। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দূর করে কর্মক্ষেত্রে মানসিক বন্ধন সৃষ্টির প্রতি মনোযোগী হওয়া। সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মধ্যে দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। বুলিং, হেনস্তা অপমান, অপদস্ত ও অসম্মান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সহকর্মীর মানসিক আঘাত,  দুঃখ  বেদনার অংশি হতে হবে। বিনোদন, সাংস্কৃতিক চর্চা, সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই কর্মক্ষেত্র হতে হবে সংস্কৃতি ও বিনোদন বান্ধব। সহকর্মীর মাঝে মানসিক  রোগের লক্ষণ দেখা গেলে তাকে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রত্যেক কর্মস্থলে বিশেষজ্ঞ কাউন্সিলিং -এর ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরি।

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা অক্টোবর মাস জুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে  নিয়েছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ৯ অক্টোবর সকালে সেখানে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ১৬ ই অক্টোবর সকালে প্রতিষ্ঠানটিতে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট আগামী ১৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৮ টায় ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গন থেকে শুরু করে শহীদ সোহরোওয়ার্দি মেডিকেল কলেজ এক র‌্যালী ও সাড়ে ৯টায় ইনস্টিউিটের সভাকক্ষে এক আলোচনার আয়োজন করেছে।

Leave a Reply